মাজলুমের এক অংশ ছিল আমার পরিবার - সুমাইয়া খাতুন
“তিমির কুহেলী ঠেলে আন তিথি শুক্লা
নিদান এই হৃদয়ে জ্বাল অম্লান উল্কা।
হেজাযের ঝড়ে জনপদে আন বন্যা
কুরআনের সুধা পিয়ে হোক ধরা ধন্যা
নয়া খেলাফত রাশেদার দীন
ঘুচাক জাহেলী প্রলাপ ছল”
মাজলুমের এক অংশ ছিল আমার পরিবার
বুঝ না থাকা অবস্থা থেকেই দেখে আসছি
লুকোচুরি খেলা। ৭১'-এর দেশ স্বাধীনের শুধু গল্প শুনেছি, কার্যক্ষেত্রে নিজেদের সব সময় পরাধীন নাগরিক মনে হতো। যখন বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই নিজস্ব রাষ্ট্রের প্রতি ক্ষোভ জমা হতে থাকে। আমি বা আমার পরিবার, আত্মীয়, বন্ধু-স্বজন অপরাধী নয়, তবুও আমাদের তাড়িয়ে বেড়ানো হয়েছে প্রতিনিয়ত। কতশত রাত ঘুমোতে দেওয়া হয়নি, কোথাও বসতে পারিনি, মন খুলে কোথাও ঘুরতে পারিনি, ঠিকমতো কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারিনি।
খুব করে চাইতাম- আমার জন্মভূমি সবার জন্য উন্মুক্ত হোক। স্বৈরাচারীর পতন হোক। দলমত নির্বিশেষে সবাই ভেদাভেদ ভুলে একটা সুন্দর রাষ্ট্র গঠনের জন্য কাজ করবে। যে রাষ্ট্রে থাকবে না কোনো আহাজারি। সাধারণ জনগণপর মনে থাকবে না কোনো আতঙ্ক।
ঠিক তিন বছর আগে হায়েনাদের জন্য সব সময় আতঙ্কে থাকতে হতো। অতঃপর একদিন সকল মায়া ত্যাগ করে একমাত্র মা-কে ঘরে রেখে গ্রাম ছেড়ে শহুরে জীবন বেছে নিতে হয়েছে। অপরাধ ছিল শুধু- আমি ও আমার পরিবার ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ কর্মী। আলহামদুলিল্লাহ! আজ আমরা মুক্ত বাতাসে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারছি।
বলছিলাম ২৪'-এর জুলাই গনঅভ্যুত্থানের পূর্বের কথা। কতটা ভয়াবহ ছিল আমাদের সেইসব দিনগুলো।
আমাদের বিজয়-
ও পুনঃস্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
প্রিয় ছাত্র ভাইয়েরা! কোটা সংস্কারের উদ্দেশ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়। কিন্তু তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার খুনি শেখ হাসিনা -
ছাত্র-জনতার দাবি না মেনে উলটো তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দমন-পীড়নমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং সরাসরি গুলি করে হত্যার নির্দেশ দিয়ে কারফিউ জারি করে। এই দমন অভিযানে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে, যা আমাদের কাছে "জুলাই গণহত্যা" নামে পরিচিত।
সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে নিরীহ ছাত্রজনতার ওপর এই অভিযান পরিচালানা করেন।
এক পর্যায়ে (১৬ জুলাই-২০২৪) আন্দোলনের অন্যতম সক্রিয় ব্যক্তি যিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সহযোদ্ধা-রংপুরের অকুতোভয়া বীর আবু সাইদ" বুক পেতে দিয়ে একজন পুলিশ সদস্যের গুলিতে নিহত হন। এই আবু সাঈদই হলো জুলাই বিপ্লবের প্রথম শহীদ । অতঃপর উল্কার বেগে এই আন্দোলন সারা দেশে এমনকী দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে এটি অসহযোগ আন্দোলনে রূপ নেয় । পরবর্তীতে আন্দোলনকে সফল করার জন্য দল-মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং ছাত্রজনতা কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সরকারের পক্ষ থেকে নয় দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সকল দাবি একত্রিত করে একটি চূড়ান্ত দাবি উত্থাপন করেন। এটি এক দফা দাবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল- "প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার নিঃশর্ত পদত্যাগ"। এই ঘোষণার মাধ্যমে কোটা সংস্কারের আন্দোলন দেশব্যাপী সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নেয় এবং সর্বাত্মক অসহযোগ কর্মসূচির সূচনা হয়। সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তারা রাজপথ ছাড়বেন না, যা ছাত্র-জনতাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের আন্দোলনের জন্য ঐক্যবদ্ধ করে।
অতঃপর (৫ আগস্ট অর্থাৎ ৩৬ জুলাই) ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকার হাল আমলের ফেরাউন শেখ হাসিনার পতন হয়। একপর্যায়ে পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ফ্যাসিস্ট হাসিনা।
উক্ত আন্দোলনকে সফল করতে বুকের তাজা রক্ত ঝরিয়ে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন অগণিত ছাত্রজনতা, শিশু থেকে কিশোর।কত-শত ভাই-বোনেরা গাজি হয়ে বেঁচে আছেন বাংলার জমিনে। তাদের অর্জিত সেই আন্দোলন আজ আমাদের কাছে "জুলাই বিপ্লব" নামে পরিচিত।
সর্বপরি শুকরিয়া ও কৃতজ্ঞতা মহান রবের, যিনি আমাদেরকে দান করেছেন কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আলহামদুলিল্লাহ! ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী!
আমাদের চাওয়া-
আলহামদুলিল্লাহ! জুলাই বিপ্লবের" মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি পুনঃস্বাধীনতা।
আমরা চাই না আর কোনো লুকোচুরি, আর কোনো আহাজারি। চাই না হারাতে আর কোনো প্রিয়জন। চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক হায়েনার থাবায়। চাই না আর কোনো স্ত্রী স্বামীহারা হোক। আর কোনো সন্তান বামা- মা হারিয়ে এতিম অবস্থায় দিন কাটাক।
আমাদের অন্তর থেকে মুছে যাক সকল আতঙ্কের ছোঁয়া। আমরা বাঁচতে চাই স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে । আমরা চাই সমাজের প্রতিটি স্তরে মানুষ ফিরে পাক তার ন্যায্য অধিকার।
-স্মৃতিচারণ :
জাপিত জীবনের গল্প
#সুমাইয়া বিনতে আফজাল
২য় স্বাধীনতার' ১ম বর্ষপূর্তি


